মর্জিয়া বেগম
মাগো,ওরা বলে
সবার কথা কেড়ে নেবে,
তোমার কোলে শুয়ে-
গল্প শুনতে দেবে না,
বলো মা,তাই কি হয়?
_আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ।
ফেব্রুয়ারির ২১তারিখ,দুপুর বেলার অক্ত,
বৃষ্টি নামে,বৃষ্টি কোথায়,বরকতের রক্ত।
_আল মাহমুদ।
এ সমস্ত লাইনগুলো আজও বাঙ্গালির হৃদয়ে মনে প্রাণে আবেগের শিহরণ তৈরি করে।১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মায়ের ভাষা,হৃদয়ের ভাষা,প্রাণের ভাষা বাংলাভাষাকে রক্ষার জন্য লাল রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ।
“মাতৃভাষা বাংলা চাই,মায়ের ভাষায় বলতে চাই”-এই স্লোগানে মুখরিত হয়েছিল,ঢাকার আকাশ-বাতাস।কিন্তু স্বৈরাচারী পাকিস্তান সরকারের পুলিশ বাহিনীর নির্মম গুলিতে ঝাঁঝড়া হয়েছিল বাংলার দামাল ছেলেদের সাহসী তরুণ বুক।
মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন রফিক উদ্দীন আহমেদ,আব্দুল জব্বার,আব্দুস সালাম, আবুল বরকত ও শফিউলরা।পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য,রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়ার নজির এটিই প্রথম।
সেদিন তাদের রক্তের বিনিময়ে,হেসেছিল দুখিনী বর্ণমালা অ আ ই ঈ,, ক খ ইত্যাদি মায়ের ভাষা।হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ঢেলে দিয়ে সবার কন্ঠে বেজে উঠে একুশে’র অমর শোক সংগীত–
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো,একুশে ফেব্রুয়ারি,
আমি কী ভুলিতে পারি”
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর,দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে,বৃহত্তর ভারত ভেঙে গড়ে উঠে ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তানের ২টি অংশ।একটি পূর্ব পাকিস্তান যা বর্তমানে বাংলাদেশ, অন্যটি পশ্চিম পাকিস্তান যা বর্তমানে পাকিস্তান নামে পরিচিত।
১৯৪৮ সালের ২১মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানী শাসক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেন-উর্দু!উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।সমাবেশ স্হলে উপস্থিত ছাত্র নেতারা সঙ্গে সঙ্গে তীব্র প্রতিবাদ জানায়–
শুরু হল ভাষা আন্দোলনের ২য় পর্যায়ের সূচনা।১৯৫২ সালে ২৭শে জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিনের ভাষণের মাধ্যমেই পল্টন ময়দানে একজনসভায় জিন্নাহ’র কথা পুনরাবৃত্তি করে বলেন,পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে একমাত্র উর্দু।নাজিম উদ্দীনের বক্তৃতার প্রতিবাদে সভা এবং ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্ররা ধর্মঘট পালন করেন।পরদিন ৩১ জানুয়ারি ১৯৫২ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রায় লাইব্রেরি হলেই ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল, মিছিল ও সমাবেশের কর্ম পরিকল্পনা করেন।ভীষণ চাপে পড়ে যায় পাকিস্তানী সরকার।
তাই তড়িঘড়ি করে ২০ ফেব্রুয়ারি সরকার স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় ১মাসের জন্য সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।২১ফেব্রয়ারি পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ৯টা হতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করল।তারা ১৪৪ ধারার বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকে।ছাত্ররা ছোট ছোট দলে মিছিল বের করে-১৪৪ ধারা মানছি না,মানবো না।রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের উপর লাঠি চার্জ করে।এমনকি ছাত্রীরাও এই আক্রমণ থেকে রেহায় পায় নি।
ছাত্র ছাত্রীরা পুলিশের দিকে ইট পাটকেল ছুঁড়া শুরু করলে,পুলিশ কাঁদনে গ্যাস ব্যবহার করে।পুলিশ বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের সামলাতে ব্যর্থ হয়ে গণপরিষদের দিকে অগ্রসরমান মিছিলের উপর নির্বিচারে নির্মমভাবে গুলি চালায়।
গুলিতে আব্দুল জাব্বার,রফিক উদ্দিন আহমেদ, আবুল বরকত নিহত হন।আরও বহু মায়ের কোল খালি হয়।বহু আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।ছাত্র হত্যার সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জনগণ তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে।উপায় অন্তর না দেখে ২২ ফেব্রুয়ারি নুরুল আমিন সরকার তড়িঘড়ি করে আইন পরিষদে বাংলাভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আনে এবং প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাশ হয়ে যায়।অনেকের মুখে উচ্চারিত হয়-
“মোদের গরব,মোদের আশা
আ -মরি বাংলাভাষা।
তোমার কোলে,তোমার বুলে
কতই শান্তি ভালেবাসা।
১৯৫৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান জাতীয় সংসদে বাংলাকে এবং উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধান পাশ করে।সেদিনের সেই তরুণ যুবকদের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ফলে বাঙ্গালি ফিরে পায় তার মায়ের ভাষা,হৃদয়ের ভাষা-বাংলাভাষা।
বাংলা আজ শুধু বাংলাদেশের ভাষা নয়।এটি বিশ্বের কাছে এক গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস সৃষ্টকারী পরিচিত ভাষা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে তার অমর কাব্য “গীতাঞ্জলি” লিখে নোভেল পুরষ্কার অর্জন করেন এবং এর মাধ্যমে বিশ্ববাসী জানতে পারে বাংলাভাষার কথা।একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে ২৩ মার্চ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলায় বক্তব্য প্রদান করলে বিশ্ববাসী জানতে পারে বাংলাভাষার মহত্ত্ব।
১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে বাংলাভাষার স্বীকৃতি বিশ্ব দরবারে এনে দিয়েছে এক বিশাল খ্যাতি।
২০১০সালের দোসরা নভেম্বর জাতিসংঘের ৫৬তম অধিবেশনে ৪র্থ কমিটিতে বাংলাদেশ আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি উত্তাপন করে- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা। প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয়।ফলে ২১শে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। ২১ ফেব্রুয়ারি অমর থাকুক সারা পৃথিবী জুড়ে।শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বাংলার দামাল ছেলেদের। যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ ক খ অ আ বর্ণমালায় গাঁথুনির প্রিয় দেশ– বাংলাদেশ।ধর্মঘট পালন করেন।পরদিন ৩১ জানুয়ারি ১৯৫২ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রায় লাইব্রেরি হলেই ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল, মিছিল ও সমাবেশের কর্ম পরিকল্পনা করেন।ভীষণ চাপে পড়ে যায় পাকিস্তানী সরকার।
তাই তড়িঘড়ি করে ২০ ফেব্রুয়ারি সরকার স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকায় ১মাসের জন্য সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।২১ফেব্রয়ারি পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ৯টা হতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করল।তারা ১৪৪ ধারার বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকে।ছাত্ররা ছোট ছোট দলে মিছিল বের করে-১৪৪ ধারা মানছি না,মানবো না।রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের উপর লাঠি চার্জ করে।এমনকি ছাত্রীরাও এই আক্রমণ থেকে রেহায় পায় নি।
ছাত্র ছাত্রীরা পুলিশের দিকে ইট পাটকেল ছুঁড়া শুরু করলে,পুলিশ কাঁদনে গ্যাস ব্যবহার করে।পুলিশ বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের সামলাতে ব্যর্থ হয়ে গণপরিষদের দিকে অগ্রসরমান মিছিলের উপর নির্বিচারে নির্মমভাবে গুলি চালায়।
গুলিতে আব্দুল জাব্বার,রফিক উদ্দিন আহমেদ, আবুল বরকত নিহত হন।আরও বহু মায়ের কোল খালি হয়।বহু আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।ছাত্র হত্যার সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জনগণ তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে।উপায় অন্তর না দেখে ২২ ফেব্রুয়ারি নুরুল আমিন সরকার তড়িঘড়ি করে আইন পরিষদে বাংলাভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আনে এবং প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাশ হয়ে যায়।অনেকের মুখে উচ্চারিত হয়-
“মোদের গরব,মোদের আশা
আ -মরি বাংলাভাষা।
তোমার কোলে,তোমার বুলে
কতই শান্তি ভালেবাসা।
১৯৫৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান জাতীয় সংসদে বাংলাকে এবং উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধান পাশ করে।সেদিনের সেই তরুণ যুবকদের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ফলে বাঙ্গালি ফিরে পায় তার মায়ের ভাষা,হৃদয়ের ভাষা-বাংলাভাষা।
বাংলা আজ শুধু বাংলাদেশের ভাষা নয়।এটি বিশ্বের কাছে এক গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস সৃষ্টকারী পরিচিত ভাষা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে তার অমর কাব্য “গীতাঞ্জলি” লিখে নোভেল পুরষ্কার অর্জন করেন এবং এর মাধ্যমে বিশ্ববাসী জানতে পারে বাংলাভাষার কথা।একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে ২৩ মার্চ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলায় বক্তব্য প্রদান করলে বিশ্ববাসী জানতে পারে বাংলাভাষার মহত্ত্ব।
১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে বাংলাভাষার স্বীকৃতি বিশ্ব দরবারে এনে দিয়েছে এক বিশাল খ্যাতি।
২০১০সালের দোসরা নভেম্বর জাতিসংঘের ৫৬তম অধিবেশনে ৪র্থ কমিটিতে বাংলাদেশ আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি উত্তাপন করে- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনা। প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয়।ফলে ২১শে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। ২১ ফেব্রুয়ারি অমর থাকুক সারা পৃথিবী জুড়ে।শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বাংলার দামাল ছেলেদের। যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ ক খ অ আ বর্ণমালায় গাঁথুনির প্রিয় দেশ– বাংলাদেশ।
লেখক: সহকারী শিক্ষক, খুনিয়াপালং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; রামু,কক্সবাজার।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।